Wednesday, 15 July 2020

প্রোথিত দশা ৩

Nadar  চলেছেন সাখ্যাৎকার  নিতে । ১৮৮৬ সাল, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ছবিসহ সাখ্যাৎকার হবে এটা। Nadar এর মুকুটে তখন পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম Aerial ফটোগ্রাফারের শিরোপা *১। এবার জুড়বে প্রথম ছবিসহ সাখ্যাৎকার তোলার শিরোপা । যার সাখ্যাৎকার নিতে চলেছেন তার বয়স একশো পূর্ণ হবে এই আগস্টের শেষে - তিনি বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ রসায়নবিজ্ঞানী  Michel Eugene Chevreul । ফ্রেডরিক রাইনিৎজার কোলেস্টেরোলের "তরলাইত-স্ফটিক"দশার আবিষ্কর্তা (প্রোথিত দশা ১) আর কোলেস্টেরল এর নামকরণ যিনি করেন, তিনি Michel Eugene Chevreul ।

"কোলেস্টেরল" নামটা একটু স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তির কাছে বিভীষিকার মতন । উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের সঙ্গে নামটা যেমন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, উহান ভাইরাস বা Covid-19 ভাইরাসের সঙ্গেও তার একটা প্রছন্ন যোগাযোগ থাকতে পারে । কিভাবে ? উহান ভাইরাস আমাদের দেহকোষের প্রবেশের জন্য, আমাদের দেহের একটি প্রোটিনকে ব্যবহার করে । আমাদের দেহের ওই দায়ী প্রোটিনটি হলো "এনজিওটেনসিন - ২ (Angiotensin-II)" । আমরা বেশিরভাগ উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করি তাও এনজিওটেনসিন - ২ এর কাজ বন্ধ করে থাকে । দেখা গিয়েছে "স্ট্যাটিন" নামক যে ওষুধটি খেলে আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, সেই "স্ট্যাটিন" ওষুধটি খাওয়া লোকেদের প্রতি উহান ভাইরাস কম আক্রমণাত্মক । যদিও এখনো পর্যন্ত কোলেস্টেরল আর উহান ভাইরাসের যোগাযোগটা পুরোপুরি প্রমাণিত নয় । তবে সাধারণ বুদ্ধি থেকে এটুকু বলা যায় যে যেহেতু কোলেস্টেরোলের উচ্চরক্তচাপ-হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্ক, আর উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা হয় এনজিওটেনসিন - ২ এর মাধ্যমে তবে উহান ভাইরাস এর সঙ্গেও কোলেস্টেরোলের সম্পর্ক থাকাটা অস্বাভাবিক নয় । চিত্র ১ এ এনজিওটেনসিন - ২ আর তার সংলগ্ন আমাদের কোষপর্দার প্রোটিনটিকে দেখানো হয়েছে। আর লাল রঙের প্রোটিনটি ভাইরাসের একটা প্রোটিনের অংশ  ।
চিত্র ১. এনজিওটেনসিন-২ আর উহান ভাইরাসের অংশ : উহান ভাইরাসের প্রবেশের মাধ্যম হলো আমাদের দেহের "এনজিওটেনসিন -২" । এনজিওটেনসিন - ২ আবার কোষপর্দা সংলগ্ন প্রোটিনটির মাধ্যমে কাজ করে । আমাদের দেহের আর একটি সম্ভাব্য প্রোটিন (নীল) কেও দেখানো হয়েছে যা উহান ভাইরাস কে আটকে দিতে পারে। কিন্তু সাধারণ ভাবে আমাদের দেহে এই প্রোটিনগুলো থাকে না।

উহান ভাইরাসের প্রবেশ আমাদের মুখ্য আলোচ্য নয় ।  আমাদের প্রোথিত দশার নায়ক "কোলেস্টেরল" এ ফিরে  আসি ।

কোষপর্দার গঠনের ভিত্তিপ্রস্থর Singer আর Nicolson এর মতবাদ (প্রোথিত দশা ২) এতটাই  দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে কোষপর্দার গঠন সহজে বোঝাতে গেলে ওটাই পথ । এ বিষয়ে Nicolson এর একটি সাম্প্রতিক লেখাও আছে । কিন্তু উন্নিশশো আশির দশক থেকেই এই ধারণা তে পরিবর্তন হতে শুরু করে । তার কিছু আমরা আলোচনাও করেছি (প্রোথিত দশা  ২) ।

১৯৬৭ সাল, এই পরিবর্তনের সূচনা মূলত যার হাত ধরে তিনি তখন Rockefeller বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত  । একদা পদার্থবিজ্ঞানী হতে চাওয়া ছাত্রের গবেষণার বিষয়ও একটা ভাইরাস, না উহান ভাইরাস নয়, আফ্রিকার উগান্ডায় প্রথম আবিষ্কার হওয়া Semliki Forest ভাইরাস । Singer আর Nicolson এর মতবাদ অনুযায়ী আমাদের কোষপর্দা একটা লিপিড সমুদ্র আর এই সুষম ভাবে বিন্যস্ত লিপিডের সমুদ্রে, থেকে থেকে গাছের গুঁড়ির মতো ভেসে চলেছে প্রোটিন । এই Semliki Forest ভাইরাসের প্রাণও লিপিড সমুদ্র দিয়ে ঢাকা, আর তাতে ভেসে চলেছে একটিই প্রোটিন । লিপিড সমুদ্র থেকে প্রোটিনকে আলাদা করতে হলে ব্যবহার করতে হয় detergent । এই detergent কতকটা আমাদের Surf Exel, Ariel, বা Tide এর detergent এর মতোই । ভদ্রলোক ততদিনে Rockefeller থেকে চলে এসেছেন Helsinki বিশ্ববিদ্যালয়ে । Semliki Forest ভাইরাসের ওই প্রোটিনটিকে আলাদা করার চেষ্টা করছিলেন । বাধা পেলেন, কেমন বাধা ? এ প্রোটিন সহজে আলাদা হতে চায় না লিপিড সমুদ্র থেকে ! আজব কান্ড !  Singer আর Nicolson এর মত মানতে হলে লিপিড সমুদ্রের যে অংশেই প্রোটিন ভেসে বেড়াক ওকে আলাদা হতেই হবে । কিন্তু Semliki Forest ভাইরাসের ওই প্রোটিনটি যেন আলাদা । এমন সময় একটা বিশাল সুযোগ এলো ।

বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে আমেরিকা আর ইউরোপের মধ্যে জীববিজ্ঞান নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন লড়াই শুরু হয়ে গেছিলো *২। আমেরিকাকে মাৎ দিতে জার্মানির হাইডেলবার্গ শহরে প্রতিষ্টা হয় ইউরোপিয়ান মলিক্যুলার বায়োলজি ল্যাবরেটরি । আমরা অনেকেই একে EMBL নাম চিনি। EMBL এর  প্রথম অধিকর্তা হিসেবে যোগ দেন John Kendrew । যোগ দেন Helsinki বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকও ।Semliki Forest ভাইরাসের ওই প্রোটিনটি detergent কে ঠিক কাজ করতে দেয় না । গবেষক তাঁর গবেষণার মাধ্যম পাল্টালেন । কাজ শুরু করলেন এক ধরণের প্রাণীজ কোষ নিয়ে । জীববিজ্ঞানের ভাষাতে ওই কোষের নাম হলো MDCK কোষ । আমরা আগে দেখেছি লোহিত কোষের (Red Blood Cell ) কোষপর্দা নিয়ে কাজ করতে । আমরা দেখেছি লাইপোসোমের কৃত্রিম কোষপর্দার ওপরেও কাজ করতে। কিন্তু MDCK কোষ সেটা কি বস্তু? ১৯৫৮ সালে এই কোষ কে আলাদা করতে সমর্থ হন Stewart Madin আর Norman Darby জুনিয়র । ক্রোকার স্পানিয়াল জাতের কুকুরের বৃক্ক (Kidney) থেকে আলাদা করা কোষ । তবে সে যে সে কোষ নয় । এপিথেলিয়াল কোষ । এপিথেলিয়াল কোষ হলো প্রাণীর দেহের উপরিভাগের কোষ । বিশেষ কারণে এমন উপরিভাগের কোষ গুলিকে একটু বিশেষ আকৃতির হতে হয় (চিত্র ২)।
চিত্র ২. এপিথেলিয়াল কোষ: বাইরের দিকটি কে বলে
এপিক্যাল দিক, ভেতরের দিকটি বেসোল্যাটারাল দিক ।
কমলা তীরচিহ্ন একধরণের লিপিডের গতিপথ ইশারা
করছে আর খয়েরি আর এক ধরণের ।
MDCK কোষ কে ব্যবহার করার কারণ হলো Semliki Forest ভাইরাস বৃক্কের কোষ কে আক্রমণ করে আর MDCK বৃক্কের কোষ । কাজ শুরু করার অচিরেই বোঝা গেল - MDCK কোষের দুটো দিক আকৃতিগত ভাবে শুধু আলাদা তা নয়, দুধারের কোষপর্দার প্রোটিন আর লিপিডের পার্থক্যও স্পষ্ট । চিত্র ২ এ রঙিন তীর চিহ্নের মাধ্যমে এই বিভাজন দেখানো হয়েছে । আর আশ্চর্য্য এই যে , এপিক্যাল দিকের কোষপর্দা থেকে detergent দিয়ে প্রোটিন আলাদা করা যায় না । Semliki Forest ভাইরাসের লিপিড পর্দাও একই ধর্ম দেখায় ।

সব বিবেচনা করে গবেষক দেখালেন যে, এপিক্যাল দিকের কোষপর্দায় লিপিড অণুগুলি সুষমভাবে বিন্যস্ত থাকে না , বরং কিছু কিছু জায়গায় যেন লিপিড অণুগুলি গাঢ় ভাবে সন্নিবদ্ধ থাকে, আর ওই গাঢ় জায়গাগুলো অনমনীয় । যেন অশান্ত সমুদ্রে ভাসমান ভেলা। নামকরণ করা হয় লিপিড রাফ্ট  (lipid raft)। আর লিপিড রাফ্টের কালপ্রিট কে ? কোলেস্টেরল আর সঙ্গে দোসর স্ফিঙ্গলিপিড । লিপিড রাফ্ট detergent এ বশীভূত হয় না । তাই লিপিড রাফ্টএ থাকা প্রোটিনগুলো কে detergent আলাদা করতে পারে না । Kai Simons কে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ব্যাপারটাকে সর্বজনবিদিত করতে । আশির দশকের মাঝামাঝি লিপিড রাফ্টের ধারণা দিলেও Kai এর মতামত Nature পত্রিকা ছাপতে রাজি হতে হতে ১৯৯৭ সাল হয়ে যায় !

John Beresford Leathes ও প্রায় একই জিনিস লক্ষ্য করেছিলেন (প্রোথিত দশা  ২), যে লিপিডের সঙ্গে থাকা কোলেস্টেরোল লিপিডের ধর্ম পাল্টে দেয়, লিপিড আরো গাঢ় সন্নিবদ্ধ হয়ে যায় ।লিপিডের সমুদ্রে লিপিডের চাঞ্চল্য বন্ধ করতে কোলেস্টেরোল অপরিহার্য ।

প্রাণিকোষে যে লিপিড প্রচুর পরিমানে আছে তা ফোসফাটিডিল কোলিন ।ফোসফাটিডিল কোলিনের একটি পোশাকি নাম আছে, "লেসিথিন"। এই লেসিথিন কোলেস্টেরলের সংস্পর্শে এলে এক্কেবারে সটান সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পরে । নড়াচড়া কমিয়ে দেয় । আমরা ফসফোলিপিডের লম্বা ঠ্যাঙের সঙ্গে পরিচিত (প্রোথিত দশা ১)। জলের সংস্পর্শে এলে এরা সার বেধে দাঁড়িয়ে পরে এও জানি (একটি প্রতীকী কোষ পর্দা) । ফসফোলিপিডের লম্বা ঠ্যাঙগুলো বেশিরভাগই  কার্বন -কার্বন সম্পৃক্ত বন্ধনী দিয়ে তৈরী (carbon - carbon single bond) যা কেবল হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিকের জৈব রসায়নের প্রথম দিকের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে যে কেবল হাইড্রোজেন-অলা কার্বন -কার্বন সম্পৃক্ত বন্ধনীতে বন্ধনীগুলি সবচেয়ে চঞ্চল । তাই লিপিডের সমুদ্রে ফসফোলিপিডের লম্বা ঠ্যাঙগুলো চঞ্চল থাকে । এই চঞ্চলতা কোষপর্দা স্থিত কিছু প্রোটিনের সহ্য হয় না তাই তাদের সুবিধার্থে কোলেস্টেরলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পরে। কোলেস্টেরল, লিপিডের লম্বা -লম্বা ঠ্যাঙগুলোর মাঝে গ্যাঁট হয়ে বসে পরে ওদের নড়ন-চড়ন থামিয়ে দেয় । এর থেকেই লিপিড রাফ্টের জন্ম ।

Kai এর প্রায় একই সময়, ১৯৮৭ সালে,  আরেকটি  স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ*৩ ডেনমার্কের বিজ্ঞানী Oleg Mouritsen লিপিডের এই "নট নড়ন-চড়ন" দশার কথা বর্ণনা করেন  আর নাম দেন "শৃঙ্খলাবদ্ধ লিপিড" (lipid ordered state) । যেহেতু অসমপর্দার মধ্যে মধ্যে কোলেস্টেরল গেঁথে গেঁথে এই নতুন দশার উদ্ভব তাই "প্রোথিত দশা" । কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান কিন্তু তার পরিমান সীমিত হতে হবে । জীবকোষ গতিমান, আর তাই এই জীবকোষপর্দার চঞ্চলতাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়  ।

--- প্রাপ্তিস্বীকার:  পায়েল


[পরে সময় পেলে কোষপর্দার অনেক গপ্পো আরো বলা যাবে ]

----------------------------------------------------------------------------------------------
*১ ১৮৫৮ সালে প্রথম ফানুসে চড়ে প্যারিস মহানগরীর ছবি তোলেন তিনি। Nadar এর ছবির কিছু অংশ এতে পাওয়া যাবে https://www.youtube.com/watch?v=erT2W5sxaFY .

*২ আমরা আমেরিকা-রাশিয়া , আমেরিকা-চীন এর সম্ভাব্য ঠান্ডা লড়াইয়ের কথা খবরের কাগজের থেকে বেশি করে জানি, কিন্তু যে প্রতিযোগিতা বিজ্ঞান কে ঠেলে তুলেছে তার প্রায় সবটাই আমেরিকা-ইউরোপের ঠান্ডা লড়াইএর ফল বলা যায় । লক্ষণীয় যে সব ক্ষেত্রেই মূল দেশটি হলো আমেরিকা !

*৩ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ পাঁচটি ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যাণ্ড (হেলসিঙ্কি), নরওয়ে , আর আইস্ল্যাণ্ড 

Saturday, 20 June 2020

পক্ষীবিক্ষন ও বেজায় শব্দবন্ধ


Florida Project এর Moonee র সংলাপ টা মনে পরে গেল। "these are the rooms we are not suppose to go in .... but let's go anyway ..." "this is not the right time .... but let's indulge it !"

পাতিয়ালায় আসা ইস্তক সক্কাল সক্কাল একটা মিষ্টি অসুবিধায় পরা গেল । ভোরের দিকে ছুটির দিনে জবর ঘুম দিচ্ছি এমন সময় টি-টি-টি-টিট্টিটি করে ডেকে উঠলো জানলার বাইরে । ঘরের জানলার পেছনে পুলিশ গ্রাউন্ড গাছ-গাছালিতে ভর্তি, হ্যাঁ ওখান থেকেই । ঘুমের দশটা বাজলো । উঠে পড়তে হলো । সেলিম আলী র বইটা পরে বোঝা গেল বাবা তাঁর বাছা কে হাঁটা শেখাচ্ছে ।বাছা একটু ইতস্ততঃ করছে । একবার এদিক আর একবার ওদিক করছে । কর, চুপচাপ কর, খামোখা "টি-টি-টি-টিট্টিটি" করে ডাকার কি আছে ? হাট্টিমা (Red Wattled Lapwing) । সার্থক নাম, মাঠে কুকুরকেও ঘোরাঘুরি করতে দেয় না, মাঠটা যেন নিজের সম্পত্তি।

আর (মাঝে মাঝে) দিন দোতালা লাগোয়া ছাদে ঘুরে ঘুরে সেপিয়েন্স এর অতুল কীর্তি অনুভব করছিলাম । একদল বাবু গপ্পো জুড়ে দিলো ।প্রাণখোলা গপ্পো, আর কথার এত তোড় যে এখানে ওখানে ছুটে বেড়াতে হয় ।ছজন ছটফটে বাবুর  বক-বক শুনতে শুনতে পড়া মাথায় উঠলো । Babbler কি সাধে বলে ? ছাতারে

অনলাইনে শিশুদের ক্লাস নেওয়াটা বেশ ঝক্কিসাধ্য ব্যাপার ।প্রায় প্রতিদিন এমন চলছে । ঘরের পাশেই বারান্দা । দুপুরে বেশ ছায়া পরে । ঠিক দুজনে এসে বসে পরে । না, আমার ভাষনে তাদের আগ্রহ নেই, কেবল হা করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলতে থাকে । একজন শিশু তো জিজ্ঞেস ই করে বসলে "ওটা কি স্যার ?" আমি বললাম অনলাইনের গন্ডগোল হবে, ... তা শুনতে পাচ্ছ তো আমার কথা ? .. "হ্যাঁ স্যার"  .... "তবে শুনে যাও "। ও দুজনের জন্য জল ও রেখে দেওয়া ছিল, আসত - জল পেত  - আর মুখ বেকিয়ে কত শব্দ  । বিভিন্ন "মিঠেকড়া" শব্দ । Common Myna ওরফে শালিক ।

পাশের বাগানটায় গেছি। কারিপাতা আনতে, পাশে হুট-পাট শব্দ । আর পরিত্রাহি ডাক - "ক্রি ক্রয়া - ক্রি ক্রয়া - ক্রি ক্রয়া" । বাবা মা চারটে পোনা কে সামলাচ্ছে । কারিপাতা গাছটা থেকে তোর বাড়িটা কত দুরে ! এতে এত চেঁচানোর কি আছে? আমি চলে যাচ্ছি । পরিবারের সদস্যরা বেশি উড়া উড়ি করে না , অলস।  পোনা গুলোকে মাঝে রেখে দৌড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে । ডাকতে ও আলসামো । একটু ডেকেই, চমকে দিয়ে এখন থেমে গেছে । হতভাগা গুলো Gray Partridges বা ধূসর তিতির ।

সাইকেলে ফিরছি, এসে আমার নজর কাড়তেই হলো ? এত ছোট বহর তাও নজর এড়ালো না ! ধাঁই ধাঁই করে যাচ্ছে আর আসছে । বাড়িতে ফুল ফুটলেই আসবে আর সব পরাগরেণু সাফ করে দেবে । কষ্ট করে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো ! Purple Sunbird তো তাই রোদে ভিজিয়ে ছাড়লো ! বেগুনি মৌটুসী ।

সেদিনও ছাদে পায়চারি করছি সঙ্গে Hadfield এর গগন অভিযান । অমনি সময়ে , সরু কাঠির মতন পেছন ঝোলা সবুজ জামা পরে দুটোকে আসতে হলো । চুপচাপ কাজ সারতে লাগলো । বসে আছে, হটাৎ চলে গেল?, না বেঁকে ফিরলো, আবার বেঁকলো আর ফিরলো ।সঙ্গে করে কি ঘণ্টার মাথা নিয়ে এলো কে জানে? এসে বসে মুখ ঠুকতে লাগলো।  ঠুকে ঠুকে ঢিট করছে আর পকাপক পোকা সাবাড় করছে । দেখতে দেখতে সূর্য অস্ত গেল পড়া আর হলো না । বাঁশপাতি, common Bee-eater.

একে ডেভিডের সঙ্গে তুলনা করা চলে। আকারে গোলিয়াৎ ডেভিডের থেকে বড় হলেও ডেভিডের কাছে তার নাকালের অন্ত নেই । এই ডেভিড কে দু ধরণের গোলিয়াৎ এর সঙ্গে লড়তে দেখেছি । একটা ছোট গোলিয়াৎ আর একটা বাবা-গোলিয়াৎ ।ছোট গোলিয়াৎ কে প্রায়ই দেখা যায়। তা হলে কি হবে স্বভাব তো ভালো নয়, নোংরা নিয়ে ধুলোখেলার অভ্যাস ।ছোট গোলিয়াৎ কে এখানে অনেকেরই নাপসন্দ । খয়েরি-সাদা-কালো দাগওয়ালা জামার লোকগুলোর সঙ্গেও ওদের সমস্যা । আর বাবা গোলিয়াৎ খালি রাজকীয় চালে টৈ -টৈ করে বেড়ায় । খুঁজেই চলেছে তো খুঁজেই চলেছে । ডেভিড নিজের সম্পত্তি, জমিজমা সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল । ছোট বা বাবা -গোলিয়াৎ যদি অনুপ্রবেশ করে সেলফিশ জায়েন্টের থেকেও কড়া শাস্তি । ওদের সব ঝামেলা আমাদের ছাদে এসেই করতে হবে । ডেভিড হলো গিয়ে Drongo, ফিঙে। ছোট গোলিয়াৎ আর বাবা গোলিয়াৎ হলো যথাক্রমে house Crow (পাতিয়ালার পাতিকাক) আর black kite (চিল )। খয়েরি-সাদা-কালো দাগওয়ালা জামার লোকগুলো হল Treepie (হাঁড়িচাচা)।

ফাইনম্যান বলেছিলেন পাখিটার নাম জেনে কি হবে শুধু ! তবে নামটা না থাকলে তো অপরকে তো বোঝানো যেত না সহজে।

Thursday, 20 February 2020

প্রোথিত দশা ২


Charles Best একবার তাঁর এক চিঠিতে লিখেছিলেন যে "আমার পিএইচডি থিসিসের কাজটা বোধ হয় অবিস্বরণীয় হয়ে রইলো. .." তা কেবল এজন্য নয় যে তিনি, Frederick Banting আর James Collip এর সঙ্গে মিলে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রথম ইনসুলিনের প্রথম সফল প্রয়োগ করেন, বরং তাঁর "PhD পেপারটা  John Bersford Leathes এর মতন একজন খুঁটিয়ে পড়েছেন" বলে ।

১৯২০ র দিকে বিজ্ঞানীরা জীবকোষ পর্দার গঠন নিয়ে প্রথম ব্যাখ্যা দেন । তারপর বিভিন্ন পর্যায়ে, সময়ের মধ্যে দিয়ে, বিভিন্ন মতবাদ যুক্ত-বিযুক্ত হয়ে জীবকোষ পর্দার গঠনের যে চিত্রটা আমরা "মিত্র-চৌধুরী-সাঁতরা " বা "স্যান্যাল-চট্টোপাধ্যায়" বইতে পাই সেটা ১৯৭২ এর দিকে Jonathan Singer এবং Garth Nicolson এর দেওয়া । সে মতবাদ অনুযায়ী কোষপর্দা একটা নমনীয় আকৃতি, যার দুধারে লিপিড অণুগুলি সুষমভাবে বিন্যস্ত থাকে, তাতে সাঁতার কেটে বেড়ায় অসংখ্য প্রোটিন। সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর ওই মতবাদ কে অবিশ্বাস করার অবকাশ ছিল না, কারণ এই ধারণা টি Nigel Unwin এবং Richard Henderson এর ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপিতে তোলা ছবির ওপর সুপ্রথিষ্ঠিত ছিল । Singer এবং Nicolson  র মতবাদ মতবাদ অনুযায়ী কোষপর্দা নমনীয় এবং তার গঠন সর্বত্র সমান। 

ওই ধারণায় প্রথম ধাক্কা লাগে একটি অতি সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে । পরীক্ষাটিতে কোষপর্দার লিপিড সমুদ্রে কিছু বিশেষ লিপিড ছেড়ে দেওয়া হয় যার বিশেষত্ব হলো বাকি লিপিডগুলোর থেকে ওগুলো আলাদা করে চেনা যাবে । লক্ষ করে দেখা গেল, বিশেষ লিপিডগুলো কোষপর্দার কিছু কিছু জায়গায় জটলা বেঁধে থাকে, সেখানে ওদের নড়াচড়াও বেশ কমে যায় । পরীক্ষাটি করেন, Erich Sackmann, আর তাতে "ঘৃতাহুতি" পরে Morris Karnovsky আর Richard Klausner এর যুগ্ম পরীক্ষা থেকে । Morris Karnovsky কোষপর্দার ওই জটলা বাঁধা জায়গাগুলোর একটা নাম রাখেন "lipid microdomain".  পরে Kai Simons এবং Gerrit ven Meer, "lipid microdomain" বিশ্লেষন করে দেখান লিপিডগুলোর ওই বিশেষ দশার জন্য দায়ী পদার্থটি আমাদের প্রোথিত দশার নায়ক "কোলেস্টেরল"।

John Bersford  Leathes তখন ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কাউন্সিলের হর্তাকর্তা । দু দুটো হাসপাতালের গবেষণাগারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। শারীরবিজ্ঞানের প্রশিক্ষিত হলেও চোখের অসুবিধের কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেন নি । শুরু করেন গবেষণা, যা মূলতঃ চিকিৎসাশাস্ত্র বা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পক্রিয়া বিষয়ক - যেমন "DNA গঠনকারী অণু আমাদের দেহে কি ভাবে তৈরী আর নষ্ট হয়", "ক্ষুদ্রান্তে কিভাবে খাবারের শোষণ হয়" ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পরের দিকে চিকিৎসাশাস্ত্রে রসায়নবিজ্ঞানের প্রয়োগের দিকে আকৃষ্ট হন আর সে গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল স্নেহ পদার্থ (ফ্যাট বডি) । তখন কে জানতো, যে তাঁর পর্যবেক্ষন কোষপর্দার গঠনের এক নতুন ধারণার সূত্রপাত করবে । আর সেটা বুঝে ব্যাখ্যা করতে আরো ষাট বছর লেগে যাবে ।

১৯২৫ সালে  চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি নামকরা পত্রিকা "Lancet" এ "Role of Fats in Vital Phenomena" শীর্ষক তাঁর একটি লেখা বেরোয় ।সে লেখার সারাংশ করলে দাঁড়ায় যে, লিপিড কেবল জলীয় মাধ্যম কে অপছন্দ করে তা নয়, বিভিন্ন ধরণের লিপিডের পরস্পরের মধ্যেও ছুৎমার্গ আছে । যেমন, শুধু ফসফটিডিল কলিন (PC) আর ফসফটিডিল কলিন/কোলেস্টেরোলের (PC-C) মিশ্রনের ধরণ-ধারণ পরস্পরের থেকে আলাদা । PC-C গুটিসুটি মেরে কম জায়গা নেয়, যেখানে একই পরিমান PC ওর থেকে বেশি জায়গা দখল করে থাকে। বলা বাহুল্য PC এই মগজ-ধোলাই এর জন্য দায়ী কোলেস্টেরল। একাএকা থেকে যে lequid-crystal এর মতন কিম্ভুত দশা দেখতে পারে সে সব করতে পারে (প্রোথিত দশা ১)! কিন্তু কেন ?

                                                                                                                                         চলবে। ...

প্রাপ্তিস্বীকার : ইন্টারনেট