জড়ের থেকে জীব, জীবের থেকে জড় নয়। তাই তো জীবকে খেতে পড়তে জড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রথমবার যখন জীব আর জড় ঝগড়া করে আলাদা হলো, তখন একটা দেওয়ালের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এমন একটা দেওয়াল দরকার ছিল যা অভেদ্য আবার অভেদ্যও নয়। মানে আলাদা করলেও জীবের জীবন ধারণের জন্য যা যা দরকার তা ওই দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে সে নিতে পারবে। জীব তাই শুরু থেকেই স্বার্থপর। সব সুবিধা নেবে কিন্তু আবার আলাদাও থাকবে। কি আর করা, কোষ পর্দা তাই অভেদ্য না হয়ে হলো "প্রভেদক ভেদ্য পর্দা" (Semi-permiable membrane)।
কোষ পর্দা না হয় প্রভেদক হলো, কিন্তু সে কি একা একা জিনিসপত্র এদিক ওদিক করতে পারে? সত্তরের দশকের প্রথম দিকে Roger David Kornberg এরই উত্তর খুঁজছিলেন। তিনি তখন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির Harden M. McConnell এর Ph.D ছাত্র। Roger Kornberg কোষ পর্দার ওই আদান-প্রদানের ব্যাপার টা লাইপোসোমের (একটি প্রতীকী কোষ পর্দা) ওপর পরীক্ষা করছিলেন। ফসফাটিডিল কোলিন দিয়ে তৈরী ওই লাইপোসোম তিনি একটু কায়দা করে বানিয়েছিলেন। লাইপোসোমের প্রধান উপাদান ফসফাটিডিল কোলিনই রাখেন কিন্তু লাইপোসোমের দুদিকের প্রাচীরের একদিকে ফসফাটিডিল কোলিনের সঙ্গে তার এক ভাইকে রাখেন। সেই ভাইটির নাম টেম্পোকোলিন (TEMPOcholine)। এই টেম্পোকোলিনের একটি বেজোড় ইলেট্রন থাকে, তাই টেম্পোকোলিন ভেতরের দিকে আছে না বাইরের দিকে আছে তার ওপর নির্ভর করে ওই বেজোড় ইলেক্ট্রনটি ভিন্নধর্মী হয়। সেই ভিন্ন ধর্ম ধরা যায় ইলেট্রন প্যারাম্যাগনেটিক রেসোনেন্স এর মাধ্যমে। পরীক্ষায় ধরা পরে যে প্রথম প্রথম কেবলমাত্র ভেতরের দিকে থাকলেও টেম্পোকোলিন পরে বাইরের প্রাচীরেও চলে আসে। টেম্পোকোলিনের এই ডিগবাজি কে FLIPFLOP বলে।
লিপিড বা টেম্পোকোলিনের এই স্বতঃস্ফূর্ত ডিগবাজি খেতে সময় লাগে বটে কিন্তু ব্যাপারটা কোষপর্দার জন্য শুভ নয়। কারণ এরকম চলতে থাকলে কোষপর্দার শরীর একটা সাম্যতার দিকে এগোবে যেটা একেবারেই কাম্য নয়। আবার লিপিড যদি নিজেই অসাম্য তৈরি করতে চায়, সেটিও হবার নয়। কারণ লিপিডের দুটো অংশ থাকে, একটি জল ভালোবাসে আর একটি জল থেকে দূরে থাকে। কোষপর্দার মধ্যে দিয়ে লিপিড টানাটানি করতে গেলে এই ভালোবাসাবাসিগুলো কে বিসর্জন দিতে হবে। তাই লিপিডের একার পক্ষে অসমতা তৈরী করা খুব চাপ। Mark Bretscher ব্যাপারটা অনুমান করেছিলেন। তাঁর দূরদৃষ্টি অনুযায়ী কোষপর্দায় কিছু সহায়ক বস্তু থাকে যারা অসাম্য তৈরী করে আর তার জন্য কোষকে গা ঘামিয়ে কাজ করতে হয়।
যে প্রোটিনগুলো কোষপর্দায় অসাম্য আনার জন্য বাসা বাঁধে তারা সাধারণতঃ তিন রকমের হয়। একরকম, যারা ভেতর থেকে লিপিড অনু কে বাইরে আনে (উল্টে দেওয়া) একে FLIPPase বলে | চিত্র ১ এ যে উল্টো "Y" আকৃতির প্রোটিনটি দেখানো হয়েছে সেটি একটি FLIPPase। এগুলোর কাজ করার জন্য যে শক্তির দরকার হয় সেটা "এটিপি" সরবরাহ করে। তাই এরকম প্রোটিনগুলো কে ATPase ও বলে।
দ্বিতীয় রকম উলটো কাজটি করে, মানে লিপিড অনুকে বাইরে থেকে ভেতরে আনে (পাল্টে দেওয়া) একে FLOPPase বলে। চিত্র ২ এ যে "কাঁচির" মতন (বন্ধ ও খোলা অবস্থায়) প্রোটিনটিকে দেখানো হয়েছে সেটি FLOPPase। FLOPPase গুলোর কাজের জন্যও এটিপি দরকার হয় তবে এদেরকে "এটিপি-নির্ভর-পরিবনকারী" প্রোটিনও বলে বা ATP-Binding-Cassette (ABC) Transporter বলে।
আর শেষের টি লিপিড অনুকে দুদিকেই ছড়িয়ে দেয় (এলোমেলো করে দেওয়া) একে Scramblase বলে। চিত্র ৩ এ যে "প্রজাপতির পাখনা"র মতন প্রোটিনটি দেখানো হয়েছে সেটি Scramblase। Scramblase গুলোর কাজের জন্য এটিপি-র দরকার হয় না কিন্তু ক্যালসিয়াম এতে সাহায্য করে।
প্রাপ্তিস্বীকার : পায়েল
তথ্য সংগ্রহ : Protein Data Bank, ইন্টারনেট
চলবে, কিন্তু দেরি হতে পারে !! ...