এখানে বলে রাখি, যে কোনো কোষ পর্দার দুটো দিক থাকে - একটা বাইরের দিক আর একটা ভেতরের দিক । আর এই কোষ পর্দার গঠন এর জন্য অত্যাবশ্যকীয় অনু হলো lipid। বাংলা তে আমরা যাকে "স্নেহ পদার্থ *" বলে থাকি। আমাদের দেহে যে প্রায় "তিন কোটি বাহাত্তর লক্ষ কোটি " কোষ আছে তার প্রত্যেকটার পর্দার মূল গঠন ওই "স্নেহ পদার্থ " দিয়ে। তা, ওই স্নেহ পদার্থের অনেক ভাগ আছে। সব তো এখানে বলা যাবে না, কেবল চারটের নাম করবো যেগুলো একটু বেশিই থাকে। এমন চারটে হলো: ফসফাটিডিল কোলিন, ফসফাটিডিল ইথানোলামিন, ফসফাটিডিল ইনসিটোল, আর স্ফিঙ্গলিপিড।
Mark Bretscher এর আগে সাধারণ ধারণা ছিল না যে কোষ পর্দার দুটো দিকের অনুর ধরণ দু রকম।আমার এই লেখার বিষয় আমাদের কোষ পর্দার দু দিকের অসাম্ম্য এবং তার সঙ্গে জড়িত আশ্চর্য কিছু কথা।
Mark Bretscher দেখালেন যে রক্তকণিকা র বাইরের দিকে ফসফটিডিল কোলিন আর স্ফিঙ্গলিপিড বেশি পরিমানে থাকে আর ভেতরের দিকে ফসফটিডিল ইথানোলামিন আর ফসফটিডিল ইনসিটোল বেশি থাকে। কিন্তু এই যে অপ্রতিসম গঠন তার কি কোনো কাজ আছে? সে উত্তর বলতে গেলে আরো কিছু জানানো দরকার।
আমাদের দেহে কোষ পর্দা সবসময় পরিবর্তনশীল - খালি তৈরী হচ্ছে আর ক্ষয় হচ্ছে। আর এই তৈরী ও ক্ষয় কোষ পর্দার যে অংশ থেকে হয় সেই জায়গায় কোষ পর্দার বক্রতা বেড়ে যায় এবং তার জন্য কোষ পর্দার দু ধারের অপ্রতিসম গঠন দায়ী।
আর দ্বিতীয় কাজটি জানার জন্য আমাদের ১৯৭০ থেকে আরো ছয় বছর পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৬৪ সালে ।সে বছর একজন ভেনিজুয়েলান বিজ্ঞানী তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে জার্নাল অফ সেল বায়োলজি তে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। Humberto Fernandez-Moran ১৯৪৪ সালে, যেসময় জার্মানি যুদ্ধবিদ্ধস্ত, সেসময় ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ (জার্মানি) থেকে PhD ডিগ্র্রী লাভ করেন। উনিই প্রথম diamond-knife এর ব্যবহার করেন, যা ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ এ দেখার জন্য, শরীরের কোষ কাটার জন্য ব্যবহার করা হয় । উনি NASA র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন চাঁদের থেকে আনা পাথর বিশ্লেষণ করার জন্য ।ওনার কাজের জন্য ওনাকে Nobel Prize এর জন্য মনোনীত করা হয় কিন্তু উনি তা অস্বীকার করেন কারণ শর্ত ছিল যে তাকে U.S.A র নাগরিকত্ব নিতে হবে ।এহেন একজন নীতিবাদী বিজ্ঞানী জার্নাল অফ সেল বায়োলজি তে যে আর্টিকেল টি লেখেন সেখানে উনি গরুর হার্ট এর পেশীর কোষের একটা ছোট্ট অংশ বিশ্লেষণ করছিলেন । ওই ছোট্ট অংশটির নাম মাইটোকন্ড্রিয়া। মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের শক্তি সরবরাহ করে কোষ কে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে ।Humberto লক্ষ্য করলেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার পর্দার গায়ে ভেতরের দিকে মুখ করে সার বেঁধে এক ধরণের মাশরুম এর মতন অনু সাজানো আছে ।উনি এটাকে "ম্যাক্রোমলিক্যুলার রিপিটিং ইউনিট" আখ্যা দেন। এই ভাবে সাজানো অণুগুলো কে প্রোটিন বলে । Humberto যে প্রোটিন টি দেখেছিলেন সেটা কে আমরা "এটিপি সিন্থেজ" বলি। নিচের ছবিতে (ছবি. ১) ওটাকে আলট্রা-হাই রিসোলিউশন (ক্রায়ো ইলেক্ট্রন) মাইক্রোস্কোপ এ দেখতে যেমন লাগে তা দেখানো হয়েছে ।
ছবি. ১ : এটিপি সিন্থেজ |
গরম আর ঠান্ডা গা-ঘেসিয়ে রাখলে তাপমাত্রা গরম থেকে ঠান্ডার দিকে ছড়িয়ে পরে, পজিটিভ আর নেগেটিভ কানেক্ট করলে বিদ্যুৎ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ এর দিকে যায়*১ । বেশি থেকে কমের দিকে ছড়িয়ে দেওয়াটা প্রকৃতির ধর্ম - সেটা একটা সুস্থির অবস্থা তৈরী করার পক্ষে। আর এটাই তাপগতিবিদ্যা (Thermodynamics) এর দ্বিতীয় সূত্র এর বিষয়বস্তু ।প্রাণ এর স্পন্দন যে তাপগতিবিদ্যা (Thermodynamics) এর দ্বিতীয় সূত্র মেনে চলে তা বহুদিন আগেই বিখ্যাত কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী Erwin Schrödinger তাঁর "What is life" বইতে লিখে গেছেন।
কোষ পর্দার অপ্রতিসম হওয়ার ধারণাও যেন এর সঙ্গে মেলে। একদিকে একটা জিনিস বেশি থাকলে তবেই তা কম এর দিকে ছড়িয়ে পড়বে। আর কোষ পর্দা অপ্রতিসম রেখে, তার মধ্যে স্তিথ প্রোটিনকেও অপ্রতিসম ভাবে রাখলে প্রাণ তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে ।
চলবে ...
অনুপ্রেরণা : An Introduction to Biological Membranes: Composition, Structure and Function by William Stillwell
তথ্য সংগ্রহ : ইন্টারনেট
প্রাপ্তিস্বীকার : পায়েল
---------------------
* "স্নেহ পদার্থ (বস্তু)" র ইংরেজি সঠিক সমার্থক হবে "Fat Body"; সেক্ষেত্রে Lipid কে লিপিড বলা যেতে পারে ।
*১ আসলে ইলেক্ট্রন (নেগেটিভ চার্জ) ধেয়ে যাই পজেটিভের দিকে, প্রথা অনুযায়ী উল্টো দিকের ফ্লো টাকে বিদ্যুৎ প্রবাহ ধরা হয় ।
No comments:
Post a Comment